মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০২১

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে নতুন করে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি

 

বন্ধ থাকা, দুর্বল ও অকার্যকর কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠনে মনোযোগ দিয়েছে বিএসইসি। এরই মধ্যে অন্তত ৬ টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা অতিশয় ভদ্র, আর ভদ্রতার সুযোগ নিয়েই কিছু বে-ঈমান কোম্পানী তাদের কষ্টে অর্জিত টাকা মেরে দিয়ে খুব সহজেই হজম করতে পারে, যেমন করেছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কোম্পানী,  তবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্যার অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীদের টাকা কিভাবে ফেরত দেয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায়, গতকাল, সোমবার, পিপলস লিজিং পুনর্গঠন করল হাইকোর্ট।

এ ছাড়া, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ নতুন করে ডিএসইতে লেন-দেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এর অংশ হিসেবে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে পুনর্গঠন করা হয়েছে পরিচালনা পর্ষদ।

২০১০ সালে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হিসেবে আর থাকছেন না তাসবিরুল আলম চৌধুরী। তাকে সরিয়ে দিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কাজী ওয়াহিদুল আলমকে।

ওয়াহিদুলের এভিয়েশন ব্যবসায় বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে। তিনি বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি তিনি পর্যটন ও এভিয়েশন বিষয়ক একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক।

নতুন পর্ষদের এম সাদিকুল ইসলাম, মাসকুদুর রহমান সরকার, এটিএম নজরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূইয়া, মুহাম্মদ ইউনুস ও মুহাম্মদ শাহ নেওয়াজ।

এই সিদ্ধান্তে পাঁচ বছর ধরে কার্যক্রম বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়া হাজার হাজার মানুষ তাদের নাই হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরে পাওয়ার আশা ফিরে পেল।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। একই নির্দেশনায় বস্ত্র খাতের দুই বন্ধ প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলও ফ্যামিলি টেক্সের পরিচালনা পর্ষদও পুনর্গঠন করা হয়েছে।

বিএসইসি দ্বিতীয়বারের মতো বন্ধ ও লোকসানি কোনো প্রতিষ্ঠানের বোর্ড পুনর্গঠন করে সেটিকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিল। এর আগে বস্ত্র খাতের রিং সাইন টেক্সটাইলের বোর্ড পুনর্গঠন করে সেটিকে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছেন, পুনর্গঠন করা বোর্ড কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোম্পানির সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর, এফডিআরসহ কোনো কিছুর পরিবর্তন করতে পারবেন না।

কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘এটা একটি গুরুদায়িত্ব। ভেঙে পড়া একটি এয়ারলাইনসকে টেনে তোলা খুবই কঠিন কাজ। আমরা চেষ্টা করব বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে আগের জায়গায় নিয়ে আসা। প্রথম কাজই হবে বিনিয়োগকারীদের যে অর্থ লগ্নি করা আছে তার নিরাপত্তা দেয়া।’

প্রতিষ্ঠানটির অনেক দেনা ও লোকসানে আছে, সেখানে থেকে কীভাবে উত্তরণ হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা এখনও কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পাইনি। আমরা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে আগের জায়গায় নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে আলোচনা করব।’

তবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সহকারী পরিচালক জহিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, তারা এখনও বিষয়টি জানেন না। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখনও কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এমনকি কোনো চিঠিও আসেনি। নির্দেশনার চিঠি পাওয়া গেলেই বিস্তারিত বলা যাবে।’

বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম  বলেন, ‘পুঁজিবাজারে উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। …আগে ভালো ছিল, কিন্তু নানা কারণে এখন কার্যক্রম নেই এমন কোম্পানিগুলোকেও পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ইউনাইটেড এয়ার পরিচালনা পর্ষদের বাদ পড়া চেয়ারম্যান তাসবিরুল আলম চৌধুরীর অবস্থান কোথায়, সেটি এখন নিশ্চিত নয়। তিনি বারবার কোম্পানিটিকে আবার চালুর করার উদ্যোগের কথা বলেছেন নানা সময়। আর এতে পুঁজিবাজারে মাঝে মধ্যে শেয়ার দরে উল্লম্ফনও হয়েছে। কিন্তু শেষ অবধি আর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

শেয়ার বেচে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন উদ্যোক্তারা

বেসরকারি বিমান সংস্থা হিসেবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রথম প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এয়ার। ২০১০ সালে পুঁজিবাজার যখন চাঙা, তখন সেটি তালিকাভুক্ত হয়। শুরুর দিকে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ ছিল প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে।

সে সময় ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। তবে ২০১৫ সালের পর থেকে কোম্পানিটির অবস্থা খারাপ হতে থাকে। একপর্যায়ে উদ্যোক্তা পরিচালকরা তাদের হাতে থাকা প্রায় সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে কোম্পানিটিই বন্ধ করে দেন।

৮২০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির ৮২ কোটি শেয়ারের মধ্যে বাদ পড়া উদ্যোক্তা পরিচালকদের কেবল আড়াই শতাংশ শেয়ার ছিল। অথচ বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকতে হতো তাদের হাতে।

পাঁচ বছর ধরে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত না করা, বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেয়া, নিয়মিত এজিএম না করার কারণে সম্প্রতি পুঁজিবাজারের মূল মার্কেট থেকে ইউনাইটেড এয়ারকে সরিয়ে দেয়া হয়। গত ১৪ জানুয়ারি থেকে কোম্পানিটি লেনদেন হচ্ছে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেটে।

সেখানে বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রির আদেশ দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা, কিন্তু কেউ কিনতে রাজি হচ্ছেন না।

কোম্পানিটি ওটিসি মার্কেটে পাঠিয়ে দেয়ার পর ৭২ কোটি শেয়ারের মালিকদের টাকা কার্যত নাই হয়ে গেছে। এই অবস্থায় কোম্পানিটিকে নতুন করে চালু করতে পারলেই কেবল এই শেয়ার আবার তার মূল্য ফিরে পাবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কিন্তু ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলো চালুর উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এরই মধ্যে অন্তত ৬টি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে সংস্থাটি। চেয়ারম্যান বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিগুলো চালু করে মূল বাজারে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। জনসাধারণের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শাস্তির আওতায় আনার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

গেলো বছর মে মাসে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নানা উদ্যোগ নিচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বর্তমান নেতৃত্ব।

এই ধারাবাহিকতায় এবার বন্ধ থাকা, দুর্বল ও অকার্যকর কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠনে মনোযোগ দিয়েছে বিএসইসি। এরই মধ্যে অন্তত ৬ টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরমধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, ফ্যামেলি টেক্স, এমারেল ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ। নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেয়ার পর কয়েক মাস বন্ধ থাকা রিং শাইন টেক্সটাইলস চালু করেছে। অন্য কোম্পানিগুলো চালুর চেষ্টা চলছে।

কোম্পানিগুলো হচ্ছে:

১. ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেড,

২. ফ্যামেলি টেক্স লিমিটেড

৩. সিএন্ডএ টেক্সটাইল লিমিটেড

৪. রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড

৫. এমারেল ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড

৬. আলহাজ টেক্সটাইলস মিলস লিমিটেড

বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলছেন, পর্ষদ পুনর্গঠনের ফলে ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে কোম্পানিগুলো। তাই ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজসহ ওটিসি থাকা কয়েকটি কোম্পানিকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

কমিশনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির অর্থ নয়-ছয় করা উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শাস্তির আওতায় আনার পরামর্শ এই বিশ্লেষকের।


আরও পড়ুনঃ

বন্ধ নয়, পিপলস লিজিং পুনর্গঠন করল হাইকোর্ট

সূত্রঃ ‍নিউজ বাংলা



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: