রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ শেয়ার বাজার কি পিছিয়ে থাকবে?

 



শেয়ার টকিজ!!

বিশেষ প্রতিবেদন
K M Mizanur Rahman
Admin: DSE Money Maker
Mentor: School of DSE Money Maker

 

বাজার ভালো হবেই, চাই সবার সচেতনতা!
আমরা কি পেতে পারি না কমপক্ষে ২০,০০০ সূচক?
উন্নয়নের কতটা প্রভাব পড়ছে দেশে!
ভয় নাই যারা ফ্লোরে আটকে আছেন
বাংলাদেশের স্টক মার্কেট সূচকের সাথে যাদেরক তুলনা করা যেতে পারে
বাংলাদেশের স্টক মার্কেটের ইতিহাস কি বলে?
২০২৪ সাল বড় উত্থান হতেও পারে!! 
বাংলাদেশ এখন যে ধরণের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। সূত্রঃ বিবিসি বাংলা
ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স এন্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের এক রিপোর্টে এই পূর্বাভাস দিয়েছিলো। 'ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১' নামে এই রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়, সেই একই গবেষণা সংস্থ্যা ২০২৩ সালের রিপোর্টে বলেছে ২০৩৭ সাল হবে বিশ্বের ২০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান ছিলো ৪১ নং-এ, বর্তমানে ৩৫, ৩ বছরে এগিয়েছে ৬ ধাপ অর্থাৎ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, তা যদি হয় তবে আমাদের শেয়ার বাজার কি পিছিয়ে থাকবে?
এই রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৩০ সালে চীন হবে বিশ্বের এক নম্বর বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ, আর ভারত হবে তৃতীয়। তার মানে দাঁড়ালো চীন ভারতের বাতাস বাংলাদেশের গায়েও এসে লাগবে। আর ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বহু ধাপ উপরে উঠে পৌঁছে যাবে ২৫ নম্বরে, তার ২ বছর পরেই ২০ নম্বরে, কি মনে হয়? বাংলাদেশ কি এগুচ্ছে?
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে গুজব উঠেছিলো বাংলাদেশ শ্রীলংকার মতো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, এখন আর তা শোনা যায় না, কারণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচক এখন ইতিবাচক। সংকটের মধ্যেও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি আয় বেড়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। এক কথায় এগিয়ে যাচ্ছে বালাদেশ।
যেসব অর্থনীতিকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যাবে তার মধ্যে আছে মালয়েশিয়া, মিশর হংকং, ডেনমার্ক, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নরওয়ে, আর্জেন্টিনা, ইসরায়েল, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নাইজেরিয়া, বেলজিয়াম, সুইডেন, ইরান এবং তাইওয়ান। বর্তমান বিশ্ব সূচকে এই দেশগুলো বাংলাদেশের উপরে, কারণ তাদের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়ে বড়। তথ্যঃ বিবিসি বাংলা
উন্নয়নের কতটা প্রভাব পড়ছে দেশে!
শহরে কাজের বুয়া কি সহজে পাওয়া যায়? খুবই কম, গ্রামে মজুরও আর সহজে পাওয়া যায় না, একটা রাখাল রাখতে গিয়ে কৃষকের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়? কারণ হলো গার্মেন্ট শিল্পের প্রসার ও প্রবাসে মজুরদের চাকরির সুযোগ। ফলে শহর ও গ্রামাঞ্চলে একটি অর্থনৈতিক বুম ঘটছে। তবে বেশীরভাগ শিক্ষিতরা কিন্তু বেকার!! তারা খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে, না পারছে নিচে নামতে, না পারছে ওপরে উঠতে, তবে যারা চালাক-চতুর তারা কিন্তু বসে নেই, ফ্রিল্যান্সিং করে ভালো আয় করছে, যা দেশের অর্থনীতিতে ভালো প্রভাব পড়ছে, এ ছাড়াও রেমিট্যান্স ও তৈরি পোশাক শিল্পের ঘোড়ায় চড়ে ছুটছে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি। তাহলে শেয়ার বাজার কেনো পিছিয়ে থাকবে?
কানাডাভিত্তিক অনলাইন প্রকাশনা ‘ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট’ দেখিয়েছে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৪৬০ বিলিয়ন ডলার বা ৪৬ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশের ঠিক আগেই রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও অস্ট্রিয়ার মতো দেশ। আর ঠিক পরেই আছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম, তার মানে আমারা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম থেকে এগিয়ে আছি। তা যদি হয় শেয়ার বাজার কি পিছিয়ে থাকবে?
দেশের অর্থনীতির সূচকের প্রতিফলন দেখা যায় পুঁজিবাজারে, আমাদের পুঁজিবাজারে আসলে কি তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে? আমি বলবো অবশ্যই না, পতঙ্গ যেমন না বুঝে আগুনে ঝাঁপ দেয় তেমনি আমাদের দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারী না জেনে, না বুঝে নিজের কষ্টার্জিত জমানো টাকা শেয়ারবাজারে বিনোয়োগ করেন, তাদের অজ্ঞতার সুযোগে কিছু কারসাজীকারক তাদেরকে খুব সহজেই ঠকিয়ে অর্থাৎ ২০টাকার শেয়ার ৩০০টাকায় ধরিয়ে দিয়ে বাজার থেকে টাকা বের করে নেয়, আর সূচক বাড়তে পারে না। আমি বলবো এ দিন আর থাকবে না, যদি সাধারণ বিনিয়োগকারী সচেতন হয়, তবে সচেতনতা বাড়াতে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও শেয়ার বাজার সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও বিশেষ ভূমিকা রাখতে বা এগিয়ে আসতে হবে।
শেয়ার বাজারের একটা গতিবেগ আছে যাকে বলা হয় মোমেন্টাম, যার গতি আছে তা কখনও একটানা চলতে পারে না, যায়, থামে, থেমে যায় আবার চলে বিশ্রামের প্রয়োজন হয়, সেইরূপ আমাদের বাজারের অধিকাংশ শেয়ার ফ্লোরে বিশ্রাম নিচ্ছে, অনেকেই উদ্বেগে আছে, কবে ফ্লোর ছেড়ে উঠে দাঁড়াবে, জীবজন্ত থেকে শুরু করে যে কোনো যানবাহন সবাইকেই বিশ্রাম নিতে হয়, শক্তি নিতে হয়, ফুয়েল নিতে হয়, ফুয়েল নেয়া শেষ হলেই আবারও গতি পায়, মনে স্বস্তি আসে, তেমনি শেয়ার বাজার ফুয়েল নিচ্ছে আবার ভালো হবে, আবারও গতি পাবে ইনশাল্লাহ্।
ভয় নাই যারা ফ্লোরে আটকে আছেন

বাংলাদেশের স্টক মার্কেট সূচকের সাথে যাদেরকে তুলনা করা যেতে পারে

যেসব অর্থনীতিকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যাবে তার মধ্যে আছে মিশর যার স্টক ইনডেক্স ১৭,০৪৩.৬২, মালয়শিয়া স্টক ইনডেক্স ১৩,৪৫২.৯২, হংকং ১৮,৭৪৬.৯২, তাহলে বাংলাদেশের সূচক ২০,০০০ ছাড়াবে এতে মনে হয় সন্দেহ থাকার কথা না, শুধুই সময়ের ব্যাপার, তাই যারা আজ ভালো শেয়ার কম দামে কিনে ফ্লোরে আটকে যাওয়াও মহা চিন্তায় আছেন, তারা যদি ভাবেব টাকা গুলো ইনভেস্ট করেছেন তাহলে ক’বছর পর যা রিটার্ন দেবে তা আপনাদের কল্পনার বাইরে। তখন আমার কথার সত্যতা বুঝতে পারবেন।
২০১০সালের ডিসেম্বরে ডিএসই সূচক ছিলো প্রায় ৯০০০ সেখানে থেকে কমে ২০১৩ সালের এপ্রিলে ৩৪০০তে এসেছিলো, ১৩ বছরে এখন পর্যন্ত ২০১০ সালের সূচকই ছুতে পারে নাই, অথচ ২০০৮ সালে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সেনসেক্স সূচক ছিলো মাত্র ৭৬৯৭.৩২, ১৫ বছরের ব্যবধানে সেই সূচক আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১,৮৭২.৬২, প্রায় ৯ গুণ, দেউলিয়া দেশ, শ্রীলংকার ইনডেক্স ৮৭৫৫.১৭, বাংলাদেশ পাকিস্তানের উন্নয়নের রোল মডেল, ২০০৯ সালে পাকিস্তানের সূচক ছিলো ৬,২০০.৮৯, সেই পাকিস্তানের স্টক মার্কেট সূচক ১৪ বছর পর এখন ৪১,০২৯.০২, বাড়লো প্রায় ৭ গুণ, সেখানে বাংলাদেশের স্টক মার্কেটের সূচক মাত্র ৬৩২৫.৭৩ খুবই হাস্যকর নয়কি? বাংলাদেশের সূচক যদি পাকিস্তানের অর্ধেকও ধরি তবে সূচক কমপক্ষে ২০,০০০.০০ হওয়া উচিৎ আপনারা কি বলেন?
বাংলাদেশের স্টক মার্কেটের ইতিহাস কি বলে?
২০২৪ সাল বড় উত্থান হতেও পারে!!
সামনে ইলেকশন, ইলেকশনের পরে নতুন সরকার আসবে, স্থিতিশীলতা আসবে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ হয়ে যেতে পারে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি যদি ভালো হয়, তবে আমাদের শেয়ার বাজারও ভালো হবে এছাড়া এতোক্ষণ যে তথ্য উপাত্তগুলোর শেয়ার করলাম তাতে বাজার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই প্রবল, বাজার কিন্তু কচ্ছপ গতিতে হলেও ধীরে ধীরে বাড়ছে, ২০১০ সালের ধ্বসের পর সূচক ৩৪০০তে নেমে বর্তমানে ৬৩২৫.৩৭, অর্থাৎ বাজার কিন্তু আপট্রেন্ডে আছে, তবে গতি খুবই কম। এই কচ্ছপ গতির কারণ হলো কারসাজিকারকদের কারণে বেশ কিছু টাকা বাজার থেকে বেরিয়ে গেছে, এখন যদি বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা তৈরী হয়, তবে বাজার আর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা নাই, শেয়ার বাজার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে, আমরা যদি আমাদের শেয়ার বাজারের ইতিহাসের দিকে তাকাই তবে দেখবো ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের বড় উল্লম্ফন হয়েছিলো, তার পরে দেখলাম ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের উল্লম্ফন, যা আমি ইউটিউবে প্রকাশিত ১০ম/১১তম ওয়েবিনারে বলেছি, ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের ব্যবধান ১২ বছর, ১৯৯৬ থেকে ২০১০ সালের ব্যবধান ১৪ বছর, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল, ব্যবধান ১৪ বছর তার মানে বর্তমান সময় থেকে আগামী ২/৪ বছরের মধ্যে পাকিস্তান-ভারতের মতো আমাদের শেয়ার বাজারে একটা বড় উল্লম্ফন হলেও হতে পারে, সে আশা আমরা করতেই পারি কি বলেন?



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: