রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১

আমাদের বিদেশ প্রীতি!



বিদেশে যাওয়ার জন্য মানুষ কেন এতো উতলা হয়?

গ্রামে একটা প্রবাদ আছে,-


কাছে থাকলে যতক্ষণ

মনে পরে ততক্ষণ, 

দূরে থাকলে কিছুক্ষণ

তার পর ঠন ঠন

মানে ভালবাসা পালিয়ে যায়।  

আমাদের দেশে যারা ‍উচ্চবিত্ত, স্বচ্ছল, তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সন্তানকে বিদেশে পাঠান, তাদের দেখাদেখি কিছু মধ্যবিত্ত  আছে তারাও ঘর-বাড়ী জমি-জমা বিক্রি করে সন্তানকে পাঠিয়ে দেন বিদেশ, আর বিদেশের মোহে পড়ে সেই সন্তান বাবা-মা তথা পুরো আত্মীয় স্বজনকে ভুলে বিদেশেই থেকে যান। কারোও প্রতিই আর তার টান থাকে না।  এরা উচ্চাকংখী লোভী ও ...

আরেক শ্রেণীর মানুষ আছে, নিম্নবিত্ত তারাও বিদেশে যায়, তবে লেখা-পড়ার উদ্দেশ্যে নয়, চাকরীর উদ্দেশ্যে বেশীর ভাগ যুবক শ্রেণীর, কেউ কেউ নতুন বউ ফেলে রেখে চলে যায়, নিজের জীবন যৌবন শেষ করে টাকা কামাই করে দেশে বৌকে পাঠান, আর বেশীরভাগ বউ সেই টাকা দিয়ে পরকীয়া করে।

ওপোরোক্ত তিন শ্রেণীর মানুষই কিন্তু বাবা-মার খোঁজ খবর খুব একটা নেন না।

নিজের জীবনের সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানের সুখের আশায় এইসব বাবা-মা শেষ বয়সে একাকিত্ব, খাবার আর ওষুধ কেনার লোকের অভাবেই, মরে পড়ে থাকে, ঘরের মধ্যে।

 -সাম্প্রতিক ৩টা মৃত্যুর খবর মানুষকে খুবই পীড়া দিয়েছে-

খবরটি নীচে উদ্ধৃত হলোঃ ১৯/৪/২০২১

মনের ভেতরে নানা প্রশ্ন জাগানো তিনটি ঘটনা আজ হৃদয়কে নাড়া দিয়ে গেল!
১. পঞ্চাশোর্ধ্ব এক করোনা রোগী সুইসাইড নোট লিখে মুগদা হাসপাতাল থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। লিখে গেছেন, নিজের একাকীত্বের কথা। টাকা ছিল, পয়সা ছিল। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু ছিল না কাছে। পরিবার ও আত্মীয়দের সবাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ "উন্নত" দেশে! একাকীত্ব সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বলে লিখে গেছেন!
২. চলচ্চিত্রের "মিষ্টি মেয়ে" খ্যাত নায়িকা, সাবেক সাংসদ কবরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার পর তার একটি সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ ভাইরাল হয়েছে। তা হলো, জীবনে ভালো একজন বন্ধু পেলাম না, ভালো একজন স্বামী পেলাম না, সন্তানরাও যে যার মতো! কারো সাথে বসে এক কাপ চা খাবো, মনের কথা খুলে বলব- তা পেলাম না!
৩. "বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর" লেখক, খ্যাতনামা কলামিস্ট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর তারেক শামসুর রাহমানের লাশ নিজের বাসা থেকে দরজা, তালা ভেঙে উদ্ধার করা হয়েছে! বাসায় তিনি ছিলেন একা। স্ত্রী ও কন্যা আছেন যথারীতি "স্বপ্নের দেশ" যুক্তরাষ্ট্রে! অসুস্থ ও মৃত্যুর সময় কেউ ছিল না পাশে, কেউ জানেনি কিছু!
টাকা, পয়সা, যশ, খ্যাতি, পরিচিতি সবই ছিল। কিন্তু কারো পাশে ছিল না স্ত্রী, স্বামী বা পুত্র-কন্যা!
ছিল একাকীত্ব! অখণ্ড একাকীত্ব!
প্রত্যেকের মৃত্যুতে খুব কষ্ট লেগেছে।
কিন্তু "উন্নত" মহলে আমাদের সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থা কোনদিকে যাচ্ছে তা ভাবতে গিয়ে আবারও শিউরে উঠেছি!
হায় রে ক্যারিয়ার, হায় রে উন্নয়ন, হায় রে উন্নত বিশ্বের স্বপ্ন! হায় রে, পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা!
একটু চিন্তা করতে পারেন, একটু ভাবতে পারেন। বোঝা গেল টাকা পয়সাই সব কিছু নয়, ভালবাসাটাই প্রধান
...........আহা রে জীবন!!

ছোট্ট বেলায় মায়ের সাথে সত্যাজিত রায়  একদিন রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তার ‍সবুজ রংয়ের ডায়েরী দিয়ে রবি ঠাকুরকে বলেছিলেন কিছু একটা লিখে দাও, ঠাকুর ডায়রীটা নিলেন, বললেন কাল এসে নিয়ে যেও। ঠাকুর সত্যজিত রায়কে একটা কবিতা লিখে দিয়েছিলেন-বলেছিলেন এর অর্থ তুমি এখন বুঝবে না, একটু বড় হলে বুঝবে-কি লেখা ছিল সেই ডায়েরীতে- রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন-


কবিতার অর্থ নিশ্চয়েই কাউকে বলে দিতে হবে না, রবীন্দ্রনাথ দেশে বসেই দেশের সৌন্দর্য

 এখানে দুজন বিখ্যাত লোকের কথা বলা হয়েছে, একজন সত্যজিত রায়, আরেকজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দু’জনেই প্রচুর বিদেশ ভ্রমণ করেছেন কিন্তু বসবাস করেন নাই, তাঁদের বিদেশ প্রীতি ছিল কিন্তু দেশ প্রেম বাদ দিয়ে নয়।

 উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে বাবা-মা কেন ছেলে মেয়েকে বিদেশে পাঠায়? কেন বিদেশী ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য অস্থির থাকে অথবা যে কোন ভাবে বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার জন্য যে কেউ সব ত্যাগ করতে পারে?

বেশী উচ্চাকাংখী মানুষ নিজেও শান্তি পায় না, অপরকেও শান্তি দিতে পারে না, তাই উচ্চাকাংখী নয় ভালো মনের মানুষ হওয়া বেশী জরুরী

বাংলা ভাষায় রুচি নাই, তাইতো মোরা বিদেশ যাই




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: