মস্তিষ্ক মানব দেহের
সবচেয়ে জটিল এবং অন্যতম বৃহত্তম অঙ্গ (প্রায় ৩ পাউন্ড),
এটি 100 বিলিয়নেরও বেশি স্নায়ুর সমন্বয়ে গঠিত যা দেহের সমস্ত
ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে, বুদ্ধি, সৃজনশীলতা, আবেগ,
স্মৃতি ইত্যাদি মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
আমাদের শরীরের প্রতিটি
অঙ্গের জন্য যেমন আলাদা আলাদা খাবার আছে, তেমনি আছে ব্রেইন বা মস্তিস্কের জন্যও আলাদা খাবার,
যে সব খাবার খেলে ব্রেইন হবে অত্যান্ত শক্তিশালী ও উর্বর,
বাড়বে প্রখর মনোযোগ, মুক্তি পাবেন ব্রেইনের বিভিন্ন রোগ থেকে, ভুলে যাওয়া রোগ, আলঝেইমার, স্ট্রেস, মানসিক
রোগ যেমন- ডিপ্রেশন, ডিমেনশিয়া, অ্যাটেনশন
ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভি ডিজর্ডার, ক্যানসার প্রতিরোধ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি।
নানান উপায়ে
মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করা গেলেও বিজ্ঞানীরা কিছু খাবারের সন্ধান দিয়েছেন যা খেলে
আপনাতেই মস্তিষ্ক হয়ে উঠবে কয়েকগুণ সচল। চলুন জেনে নেয়া যাক এরকম ১২টি সুপারফুড
খাবার সম্পর্কে।
১। নারিকেল তেল
ত্বকের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে
খুবই সত্যি কথা, তেলে বড় কাজ হয়, আমাদের
দেশে মাথায় নারকেলের তেল নেয়নি এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম,
মাথা ঠান্ডা রাখে, আর তেল নেয়ার ফলে চুলের গোড়ায় গোড়ায় আঙ্গুলের স্পর্শ মাথার
রক্তসঞ্চালন বেড়ে যায় কয়েক গুণ। একটা মিরাকল-শুয়ে আছেন দুঃচিন্তায় ঘুম আসছেনা?
শোয়া থেকে উঠে পড়ুন মাথায় নারকেলের তেল নিয়ে একটু ঠান্ডা
পানি মিশিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করুন ১০/১৫ মিনিট, এর পর শুয়ে পড়ুন, নাকের
মাথার দিকে মনোযোগ দিয়ে কিছু দেখার চেষ্টা করুন, মুহুর্তেই ঘুম ধরে যাবে। পরীক্ষিত
২। বাদাম ও ফসলের বীজ (Wholegrains)
একাগ্রতা
ও ফোকাস উন্নত করতে পারে
নানান রকম বাদাম এবং বিভিন্ন ফসলের বীজ মস্তিষ্কের উন্নতির জন্য বেশ কার্যকরী। সূর্যমুখী, মিষ্টি কুমড়া, তিসি, শিমের বীজ, বাজরা, ভুট্টা, ওট, লালচাল, গম বিশেষ করে যে সমস্ত শষ্য দানার উপরে আবরণ থাকে এমন বীজ এ ক্ষেত্রে দারুণ উপকারী। এছাড়াও আখরোটও মস্তিষ্কের জনে বেশ উপকারী। নিয়মিত আখরোট খেলে মস্তিষ্কের যেকোনো রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এগুলো পর্যায়ক্রমে খেতে হবে মানে একেকদিন একেকটা খাবার খান, ব্রেইনের শক্তি বাড়বে।
৩। তৈলাক্ত মাছ (Oily fish)
মস্তিস্কে রক্ত প্রবাহ
বাড়িয়ে দেয়
তৈলাক্ত মাছে থাকে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড। ওমেগা-৩ মস্তিস্কের (Brain) জন্য অতি প্রয়োজনীয় ফ্যাট যা শরীর নিজের দ্বারা তৈরি করতে পারে না, অথচ এর অভাবে দেহে মারাত্মক সব রোগ বাসা বাধতে পারে। মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের প্রধান উপাদেয় খাদ্য এই ফ্যাটি এসিড, এগুলি মস্তিষ্কের কোষসমূহসহ দেহের প্রতিটি কোষের চারদিকে ঝিল্লি তৈরি করতে সহায়তা ও কোষের কাঠামোর উন্নতি করতে পারে।
ওমেগা -3 মস্তিস্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ানোর ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও চিন্তা করার ক্ষমতা বেড়ে যায়,
হতাশা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করতে পারে।
শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আকস্মিক
কার্ডিয়াক মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করে।
ওমেগার
ঘাটতি আজকের ব্যাপক হারে প্রতিবন্ধী শিশুর জন্মের জন্য দায়ী।
এবারে জেনে নেই কোন কোন
মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়
তৈলাক্ত মাছের মধ্যে
রয়েছে বোয়াল, রুই,
স্যালমন, ট্রাউট, টুনা, তেলাপিয়া,
রুই, আয়ার, এবং
সারডিন মাছ এছাড়া ইলিশ,
রুপচাঁদা ও পাঙ্গাশ মাছেও থাকে অল্প পরিমাণ ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, যারা মাছ পছন্দ করেন না বা নিরামিষভোজী তারা
তিসি, সয়াবিন, বাদাম, ফ্লেক্সসিড, কুমড়োর বীজ, চিয়া, আখরোট ইত্যাদি থেকে ওমেগা -3 পেতে পারেন।
৪। গ্রিন টি
মস্তিষ্কের যোগাযোগের ক্ষমতা বাড়ায়
এ দেশে বিনা পয়সায় চা পান করিয়ে নেশা ধরিয়ে দেয় ইংরেজরা, এ গল্প কে না জানে! তবে এই চায়ের মধ্যেই আছে বিস্ময়কর কিছু গুণ, আর তা যদি হয় গ্রিণ টি তবে তো কথাই নেই, গ্রিন টির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, বি, বি৫, ডি, ই, সি, ই, এইচ সেলেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিংক, ক্যাফেইন ও মেঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান৷
গ্রীন টি শরীরের
বাড়তি মেদ ঝেড়ে ফেলে ওজন কমায় তবে অনেকই জানেন না যে গ্রিন টি মস্তিষ্কের
কার্যক্ষমতাকেও বাড়িয়ে তোলে, তবে সেটা অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পান করতে হবে,
দিনে ৩কাপ। গবেষণায় দেখা গেছে গ্রিন টি বা সবুজ চা
মস্তিষ্কের যোগাযোগের ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে যেকোনো কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। তা ছাড়া
সবুজ চা পারকিনসনের হাত থেকেও মস্তিষ্ককে রক্ষা করে থাকে। এই চা চিনি ছাড়া খাওয়া
ভাল। সবুজ চা পানে মহিলাদের যকৃত, পাকস্থলী, স্তন, মলাশয় এবং কণ্ঠনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
৫। পুদিনা পাতা
এতে আছে ভিটামিন এ এবং সি
পুদিনা পাতায় প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে যা ক্যান্সার, হৃদরোগ, অ্যালজাইমারসের মতো ভয়ংকর রোগের হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে।
৬। ব্রকোলিঃ স্মৃতিশক্তি উন্নত করে
৭। বীটরুটঃ
রক্তে লোহিত কণিকা তৈরী করে
প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর বিটরুটগুলি ফাইবার, ফোলেট (ভিটামিন বি 9), ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন সি এর দুর্দান্ত উৎস।
৮। এ্যাভাক্যাডো (Avocado)
ভিটামিন A, B, C, E, K সমৃদ্ধ একটি খাদ্য।
এটি মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। যার
ফলে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। আপনি যদি প্রতিদিন ১/২ টি Avocado
আপনার খাবারের সাথে গ্রহণ করেন তবে আপনার মস্তিষ্ক অনেকটা
সুপার হিরোদের মস্তিষ্কের মত কাজ করবে।
৯। হলুদঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীরের ব্যথা কমায়
এতে থাকে ফাইবার,
নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, সি, ই,
কে, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম,
কপার, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, কারকিউমিন নামক রাসায়নিক উপাদান যা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে
বাঁচায়।
তবে যাদের গলব্লাডারের
সমস্যা রয়েছে তারা হলুদ খাবেন না এবং ডায়াবেটিসের রোগীদের অবশ্যই ডাক্তারের
পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
১০। ডাল (Lentils)ঃ মস্তিস্কের শক্তি বাড়ায়
এতে প্রচুর পরিমানে
ভিটামিন বি-৬, বি-৯,
লৌহ রয়েছে। এটি ভাতের সাথে সবচেয়ে ভালো সমন্বয় তৈরি করে।
যা মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারি। পাশাপাশি এটি Barin বা মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে।
১১। টমেটোঃ বয়সের ছাপ দূর করে
সহজলভ্য এই সবজিটি কাঁচা হিসেবে সালাদ এবং রান্না করে তরকারি হিসেবেও খাওয়া যায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট। যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষতি হবার হাত থেকে রক্ষা করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এমনকি স্মৃতি শক্তিকেও বাড়িয়ে তোলে কয়েকগুণ।
এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, কে, ফলেট এবং পটাসিয়াম। টমেটো থেকে আরও পাওয়া যায় থায়ামিন, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং কপার।
১২। ডার্ক চকোলেটঃ
চকলেট পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। মূলত কোকোয়া ফলের বীজ থেকে তৈরি করা হয় চকলেট। চকলেটে নানান উপাদেয় জিনিস মিশিয়ে একে বিভিন্ন রঙের করা হয়। কিন্তু চকলেটের মূল রঙ ডার্ক। এই রঙের চকলেট খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে বলে গবেষণায় প্রমাণিত। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এই চকলেট বেশ উপকারী। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ ডার্ক চকলেট খেলে শুধু মস্তিষ্কই সতেজ থাকবে না সেই সাথে কমে যাবে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও।
0 coment rios: