তুমি এভাবে আমার সাথে লুকোচুরি খেলছো? ফাজিল মেয়ে কোথাকার!
ফাজলামোর দেখছো কি? এতোক্ষণ তোমার সাথে আছি অথচ তুমি আমাকে চিনতে পারলে না! নাবাসাতি অভিমানের সুরে কথাটা বললো।
আমি খুবই দুঃখিত নাবাসাতি। তুমি কথা বলছো না, মনিটরে লিখছো, আমি কি করে চিনবো যে এই অদৃশ্য মেয়েটা নাবাসাতি।
এখনওকি তোমার কথা বলায় আপত্তি আছে?
মনিটরে লেখা উঠা বন্ধ হয়ে গেল। কানের কাছে ফিস ফিস করে বলল-না না না।
অদৃশ্য হয়েছো কিভাবে?
সে অনেক কথা। সেটা বলার জন্যইতো প্রায় দু‘শ মাইল উড়ে এসেছি তোমার কাছে।
-তুমি উড়তেও পারো।
হ্যাঁ ইচ্ছে করলে তোমাকেও উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারি। তাই নাকি?
-বাঃ বেশ মজা তো।
এ মজা করার জন্যই বহু কষ্ট করে অদৃশ্য হওয়া শিখছি।
-তোমার ভাগনে সাগর, গতকাল ছাদ থেকে পরে যাচ্ছিল, আমিই তাকে উঠিয়ে এ যাত্রা বাঁচিয়ে দিয়েছি।
-এটা তাহলে তোমার কাজ?
-হ্যাঁ, ভাগ্যিস ওই সময় আমি কাছাকাছি ছিলাম।
-তাহলে তো আমরা তোমার কাছে ঋণী হয়ে রইলাম।
-তাহবে কেন, আমি জাস্ট আমার কর্তব্য পালন করেছি।
-এটা তোমার কর্তব্যের মধ্যে পরে না।
-কি বলছো তুমি, একটা মানুষ চার তলার ছাদ থেকে পড়ে মরে যাবে বা হাত পা ভেঙে ফেলবে, আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো? তা ছাড়া সে তোমার ভাগনে।
-তুমি গতকালও এসেছিলে?
-হ্যাঁ
-ডাকোনি কেন?
দেখলাম তুমি জানালা দরজা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছ। তাই আর না জাগিয়ে ফিরে গিয়েছিলাম।
-রিয়েলি সরি!
সরি বলার কিছু নেই। তুমি তো জানতে না যে আমি আসবো। যাহোক অনেক রাত হয়েছে, ঘুমে তোমার চোখ ঢুলু ঢুলু করছে। তোমার ঘুমানো দরকার নইলে শরীর খারাপ করবে।
আমি ঘুমাবো আর তুমি বসে বসে দেখবে? অশরীরী হলেও কতদিন পর তোমাকে কাছে পেয়েছি। সারারাত, সারাদিন না ঘুমালেও আমার শরীর খারাপতো করবেই না বরং চাঙ্গা হবে। প্লিজ স্বরূপ ধরো। আর মজা করো না। অনেক মজা করেছো। যা মজা করতে পারো তুমি। তোমাকে ছুঁতে না পারা পর্যন্ত মন ভরছে না।
সত্যিই বলছি। স্বরূপ ধরার ক্ষমতাটা এখনও অর্জন করিনি। গতকালই অদৃশ্য হয়েছি। অদৃশ্য হয়ে প্রথমেই তোমার কাছে ছুটে এসেছিলাম। ঘুমিয়ে ছিলে তাই ডাকিনি। তোমাকে প্রাণ ভরে দেখে আবার চলে গিয়েছি। খুব ভয়ে ভয়ে আছি। আপ্রাণ চেষ্টা করছি দৃশ্যমান হওয়ার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার চেষ্টা সফল হবে। আমি দৃশ্যমান হতে পারবো।
নাবাসাতি আমার মাথার পাশে বসে তার অশরীরী হাত দিয়ে মাথার চুল বিলি করে দিচ্ছিলো-কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি টেরও পাইনি। ঘুম যখন ভাঙ্গল তখন সকাল ৮.০০টা। আমার এমন ঘুম কখনো হয় না। চার পাঁচ দিন একটানা না ঘুমিয়ে গবেষণা করেছি, কখনও ঘুমাই নি। আজ এমন হলো কেন? ওকি ইচ্ছে করেই আমাকে ঘুম পারিয়ে রেখে গেছে? ডাক্তার মানুষ, হতেও পারে! নাবাসাতির কোন সারা শব্দ পাচ্ছি না। দরজাটা হা করে খোলা, আমি নিজ হাতেই দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। স্বপ্ন দেখলাম না তো? তাই বা হয় কি করে। আমার ঘর পরিপাটি করে সাজানো। ঘরে মৃদু মন কাড়া পারফিউমের সেন্ট। হাত মুখ ধুতে আয়নার সামনে দঁড়াতেই দেখি কপালে সুন্দর করে লেখা ‘আই লাভ ইউ’ লাভ চিত্রটির মধ্যে সদ্য লিপস্টিক মাখানো ঠোঁটের চিত্র। নাবাসাতি যে এসেছিলো নিশ্চিত হলাম।
কে এই নাবাসাতি? (কন্যা বদল)
বাবা ইমদাদুল হক এবং মা মমতাজ বেগমের একমাত্র মেয়ে নাবাসাতি। তবে আসল মেয়ে নয়। এম-৮ গ্রহের বাসিন্দা ‘নোরামি হল’ তার নিজের পোয়াতি বৌকে সাথে নিয়ে পৃথিবীতে বেড়াতে এসেছিলেন। তাঁর বউয়ের বার্থ পেইন শুরু হলে তিনি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। ঐ হাসপাতালে একই সময় বার্থ পেইন নিয়ে ভর্তি হন মমতাজ বেগম। দুজনের দু’কন্যার জন্মমুহুর্তে হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যায় গোটা হাসপাতাল। নোরামি হলের কৌশলে বদল হয়ে যায় দু’কন্যা। একজন নাবাসাতি আরেকজন তিসাবানা। নোরামি হলের কৌতুহল দুই গ্রহের দুই বাসিন্দা কিভাবে বড় হয়, তাদের আচার-আচরণ, মেধা-মনন কেমন হয় এটাই তার কৌতুহলের বিষয়। একমাত্র নোরামি হল ছাড়া কেউ তা জানে না। নাবাসাতির শরীরে চিপ্স সেট করা আছে। চিপ্স এমনভাবে শরীরের সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে যে কোন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করেও তা নিরুপণ করা সম্ভব নয়। চীপস সেট করার কারণে এম-৮ গ্রহ থেকেই নাবাসাতির সব খবরা খবর জেনে নেন নোরামি হল। এ ছাড়া নাবাসাতির দেখাশুনার জন্য দু’জন এলিয়েনকে নিযুক্ত করা হয়েছে। এরা অদৃশ্য থেকে নাবাসাতির দেখাশুন করে। নাবাসাতি কখন কোথায় কি করছে, কি খাচ্ছে সব কিছু। নাবাসাতি নিজেও কোন দিন বুঝতে পারেনি তা। তবে পৃথিবীর পরিবেশে তার বুদ্ধি অনেক কমে গেছে এলিয়েনদের তুলনায়।
নাবাসাতির সাথে আমার পরিচয়
আমরা একই স্কুলে পড়তাম। নাবাসাতি ছিল একদম গবেট ছাত্রী। আমি যখন ক্লাস নাইনে ও তখন ক্লাস সেভেনে ভর্তি হলো। গ্রামের স্কুল। কোন ইন্টারভিউ লাগলো না। হেড স্যার শুধু জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘আমি তাকে চিনি’ এর ইংরেজী বলো। নাবাসাতি কিছুক্ষণ হাবার মতো হেড স্যারের দিকে তকিয়ে রইলো। মনে হয় জীবনে সে এ ধরনের বাক্য শোনে নাই। তবুও ভর্ত্তি করানো হলো। স্কুলে টিচার প্রশ্ন করলে কোনদিন একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেনি। অনেক দিন কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে সবার সামনে। পড়া মাথায়ই ঢোকে না। তবে আচার আচরণে খুবই ভদ্র্, স্কুলে কারও সাথে মারামারি করাতো দূরের কথা, একটা গালিও কোনদিন ওর মুখ থেকে কেউ শোনেনি। সহপাঠিরা ওর নাম দিয়েছিল GG, মানে Goat Girl, নাবাসাতি জানে GG-এর অর্থ good girl
নামটা তার বেশ ভালো লেগেছিলো। সহপাঠিরা ওকে কত ভালো বাসে। পাড়া-পড়শিরাও জানতো নাবাসাতি বোকা মেয়ে। ওর ইয়াকুব দাদু রসিকতা করে বলতো, তোর মায়ের যখন কোন সন্তান ছিল না তখন একটা ছাগল পুষতো। সে ছাগলকে প্লাস্টিক সার্জারি করে মানুষ বানানো হয়েছে। সেই মানুষটিই হলি তুই। এ কারণে তোর মাথায় বুদ্ধি কম। ও যে ভীষণ বোকা একথা এখন সবাই জানে, জানতাম না শুধু আমি। কে কি করলো বা বললো এগুলো নিয়ে কখনও মাথা ঘামাইনা আমি। একদিন স্কুলের মাঠে ওর এক বান্ধবী খুব জোরে জোরে ডাকছিল এই জিজি কোথায় যাচ্ছিস্? আমি ওদের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম। জিজি নামটা শুনে কৌতুহল হল। ওর বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করলাম, ওই মেয়েটার নাম জিজি! এটা আবার কোন নাম হলো নাকি? বান্ধবীটি আমার কাছে এসে আস্তে করে বললো, জিজি মানে বুঝ না, ‘গোট গার্ল’ ওর বুদ্ধি ছাগলের মতো কি না তাই আমরা ওর এ নাম দিয়েছি, বলেই চলে গেল। আমি অবাক হয়ে জিজির দিকে তাকালাম, অদ্ভুত সুন্দর চেহারা, বড় বড় সবুজাভ চোখ, গায়ের রংটাও ভিন্ন, রঙিন হালকা লাল স্বচ্ছ কাঁচের মতো, মাথার চুলের রং কালচে রেডিয়ামের মতো, আদুরে মুখ, যাদের দেখলে আদর করতে ইচ্ছে করে, অতি সুন্দর, অত সুন্দর চেহারা যার সে আবার গোট গার্ল হয় কি করে। নিশ্চয়ই কোন ঘাপলা আছে।
কিছু কিছু মানুষ আছে যাদেরকে দেখলে অস্বাভাবিক আনন্দে মনটা ভরে যায়, ভালো লাগার একটা শিহরণ জাগে মনে। নাবাসাতি সে রকমই একজন মেয়ে। ওকে দেখতে পরীর মতো লাগছে। আমি কখনও পরী দেখিনি। তবে শুনেছি পরী দেখতে খুব সুন্দর হয়। ছবিতেও পরী দেখেছি। মেয়েটাকে ছবির পরীর মতো লাগছে।
জিজি এগিয়ে এলো, এই প্রথম ওকে খুব কাছে থেকে দেখছি, আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম জিজি? ও মিস্টি করে হাসলো। আমার নাম নাবাসাতি। তোমার বান্ধবী যে তোমাকে জিজি বলে ডাকলো। নাবাসাতি নিষ্পাপ হাসে, হেসে বললো আরে! তুমি তো খুব বোকা দেখিছি। জিজি’র অর্থ বোঝ না। জিজি মানে গুড গার্ল। ওরা আমার বান্ধবী, আমাকে সবাই খুব ভালো বাসে, তাই আমার ওই নাম দিয়েছে ওরা। খুব সহজ সরল মেয়ে। যা ধারণা করেছিলাম তার বিপরীত। মনে মনে বললাম সত্যিই তুমি গুড গার্ল। ইউ আর দ্য বেস্ট গার্ল ইন দিস স্কুল, নট গোট গার্ল। অতি ভালো মেয়ে।
চলবে
0 coment rios: