রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

আরও খুন করবোঃ কদমতলীতে নিজ পরিবারের তিন জনকে খুনের পর থানায় ফোন করে এক নারী বললেন

 

ঢাকার কদমতলীতে একটি বাড়িতে এক পরিবারের তিনজনকে হত্যার অভিযোগে ওই পরিবারেরই এক নারী সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।

ওই নারী তার বাবা-মা ও বোনকে হত্যার পর নিজেই পুলিশকে খবর দেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়ারী জোনের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ।

যারা ভিকটিম হয়েছেন তারা হলেন ওই আত্মস্বীকৃত হত্যাকারীর বাবা, মা ও বোন। আর চিকিৎসাধীন আছেন তার স্বামী ও মেয়ে। ওই নারী নিজেই পুলিশকে ফোন করে জানান যে তিনি খুন করেছেন এবং পুলিশ সেখানে পৌঁছাতে দেরি করলে আরও দুজনকে খুন করবেন তিনি, বিবিসিকে বলছিলেন মি. আহমেদ।

মি. আহমেদ বলেন, সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা দেখতে পান যে দুই তলার ওপর তিন কক্ষের বাসা এবং এর একটি কক্ষে বাবা মা ও বোনের মৃতদেহ বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, মৃতদেহগুলো একটি কক্ষের মধ্যে হাত বাঁধা অবস্থায় ছিলো।

পুলিশ কর্মকর্তা শাহ ইফতেখার আহমেদ বলছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ক্ষোভ থেকেই হত্যার দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। ঠিক কী পরিস্থিতিতে কেন এ ঘটনা ঘটানো হলো সেটা আরও তদন্ত সাপেক্ষ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

"উনি বলেছেন যে ওনার ব্যক্তিগত ক্ষোভ ছিলো তার পরিবারের প্রতি। বাবা মা বোনের প্রতি। বাবা প্রবাসে ছিলো ও সেখানে বিয়ে করেছেন। তিন মাস হলো দেশে এসেছেন। তার মা দুই বোনকে অসামাজিক কার্যকলাপে বাধ্য করতেন। কিছু ক্ষোভ ছিলো। স্বামী ও পরিবারের অন্যদের সাথে অস্বাভাবিক সম্পর্ক"।

"কাল মায়ের বাসায় এসে ঘুমের ট্যাবলেট গুড়ো করে চায়ের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন।"

প্রতিবেশীরা অবশ্য বলছেন, তারা এই পরিবারের মধ্যে কোন ক্ষোভ কখনও টের পাননি। যে ভাড়া বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানকার অন্য অধিবাসীদের সঙ্গেও তাদের কারও কখনো কোন সমস্যা হয়নি বলে তারা জানাচ্ছেন।

অন্য ভাড়াটিয়াদের সাথে পরিবারটির যেমন কোন ঝামেলা ছিলোনা তেমনি তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও ছিলো না বলে বলছেন একজন প্রতিবেশী লিয়াকত মৃধা।

মি. মৃধা বিবিসিকে বলেন, "ওরা সাড়ে তিন বছর এখানে থাকে। কারও সাথে ওদের মিল নেই। ওরাও কথা বলে না, ওদের সাথেও কেউ বলে না। কোন গণ্ডগোল ছিল না বা অভিযোগও নেই কারও। ওরা নিজেদের মতো নিজেরা থাকতো। যার যার ফ্লাটে সে থাকতো।"

অথচ এমন একটি নির্বিবাদী পরিবারের অভ্যন্তরে কেমন করে এমন ভয়াবহ অসন্তোষ বা বিরোধের জন্ম হলো যে একজন নারী তার বাবা-মা-বোনকে খুন করলো-সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুলিশ যে ঘুমের ঔষধ গুঁড়ো করে চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানোর তথ্য দিয়েছে সেই একই চা ওই নারীর স্বামী ও সন্তানও পান করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

তবে পরিবারটির ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বলছেন মৃতদেহগুলো যে অবস্থায় পড়ে ছিলো, একজন নারীর পক্ষে একা বাবা-মা-বোনকে হত্যা করে এক কক্ষে রেখে দেয়া অসম্ভব বলেই মনে করেন তারা।

তিনি বলেন মেহজাবিনকে নিয়ে আগেও নানা ঘটনা ঘটেছে পরিবারটির অভ্যন্তরে। সেগুলো তদন্ত করলেই এ হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ উদঘাটিত হবে বলে মনে করেন তারা।

"তিনটা মানুষকে এভাবে মারা... এর সাথে আরও কেউ জড়িত আছে- আমার মনে হয়, তবে বাকীটা পুলিশ বের করতে পারবে। ও আমাদের বলেছে, আমরা শুনেছি।"

তবে পরিবারটির কয়েকজন আত্মীয় বিবিসিকে বলেছেন, আটক হওয়া মেহজাবিনের বোনের স্বামী ও বোনের মধ্যে অস্বাভাবিক সম্পর্কের কথা তারা শুনছেন। এ নিয়ে অনেকদিন ধরেই পরিবারের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছিলো।

অন্যদিকে পুলিশ বলছে পরিবারের মধ্যে অস্বাভাবিক সম্পর্কের কথা মেহজাবিনের প্রাথমিক বক্তব্যেও এসেছে। আবার এর আগে মেহজাবিনের মায়ের শরীরে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছিলো বলে বলছেন তাদের আত্মীয়রা।

সুত্রঃ বিবিসি বাংলা


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: