লেখা-ফেসবুক থেকে নেয়া
’৯৬ এর কোন বন্ধু থাকলে আওয়াজ দেন!!
।। কে এম মিজানুর রহমান।।
বেশীর ভাগ মানুষ কোন কিছু না শিখেই শেয়ার ব্যবসায় আসে, আমিও এসেছিলাম, ১৯৯৫ সালের জুন বা জুলাই থেকে শুরু, সে সময় মতিঝিল শাপলা চত্বর টু ইত্তেফাক লোকে গিজ গিজ করতো, এই মাথায় শেয়ার কিনে ঐ মাথায় বিক্রী করলেই ডাবল লাভ, তখন ছিল কাগুজে শেয়ার, মনে আছে নিশ্চয়! তখন আমি তরুন, নিজের জমানো টাকা ছাড়াও এর ওর কাছে ধার করে টাকা আনি আর লাভ করি, মনের ফুর্তিই আলাদা, মনে আছে ১০,০০০.০০ টাকায় কেনা সিঙ্গার, ২৬,০০০.০০ টাকা বিক্রী করার পরও সম্ভবত সে শেয়ার দর আরও বেড়ে ৫০,০০০.০০ হাজার টাকায় উঠেছিল, ১৫০.০০টাকার বেক্সিমকো ৮০০.০০শত টাকা, এই রকম আরও কত শেয়ার কিনি আর বেচি এদিকে পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার দরও প্রতিদিনই ডাবল হয় বছরের শেষের দিকে শুধু টাকা আর টাকা, তখন মনে করতাম শেয়ার দর শুধু বাড়েই, তাই সেই যে লোভের পাল্লায় পড়লাম, সামলাতে পারিনি, শেয়ার বিক্রী বন্ধ করে দিলাম কারণ বেচলেই লস, অনেক টাকার মালিক হয়েছিলাম কিন্তু কাগজে কলমেই শেষ, শুরু হয়েছিল সম্ভবত ১৯৯৫ সালের মাঝামাঝি সময় শেষ হয় ১৯৯৬ এর জানুয়ারী বা ফেব্রুয়ারীর দিকে, মাসটা ভাল করে মনে পড়ছে না। সূচক ৯০০ পয়েন্ট থেকে বাড়তে শুরু করে, ১৯৯৬ সালের শুরুতে ৩৬৫০ পয়েন্টে পৌঁছে। এর পর থেকে পতন শুরু হয়ে ইনডেক্স মে ১৯৯৯ নেমে আসে ৪৬২ পয়েন্টে। তখন রাস্তাও ফাঁকা হতে শুরু করে, সেই সাথে আমার পকেটও ফাঁকা, পোর্টফোলিওতে শেয়ার আছে কিন্তু আর বিক্রী করতে পারিনি, হাতে থাকা শেয়ার কিছু বিক্রী করতে পেরেছিলাম। সে সময়ে অনেক দরে কেনা কিছু শেয়ার এখনও আমার ট্রাংকে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কিঅবস্থা হয়েছিল আমার? সেসময় অনেকেরই আমার মতো অবস্থা হয়েছিল, তবে ভাল শিক্ষা হয়েছিল এ কারণে ২০১০ সালের ধ্বসে টিকে গিয়েছিলাম।
তাই বলছি যারা না বুঝে, না শিখে এ ব্যবসা করতে আসে, লস খাওয়ার পরিমাণ তাদেরই সবচেয়ে বেশী। আর তাদের কথা মাথায় রেখেই আমি সম্পূর্ণ বিনে পয়সায় কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি, এমন কিছু অভিজ্ঞতাও শেয়ার করছি যা আমার একান্তই ব্যক্তিগত, কোন বই বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাবেন না। তারপরেও দেখি অনেকেরই আগ্রহ নেই জানা বা শেখার প্রতি, কোন্ শেয়ার কখন কিনতে হয়, কখন বেচতে হয়, কখন টাকা নিয়ে বসে থাকতে হয়, অনেকেই তা জানেন না, তাহলে লাভ ঘরে তুলবেন কি করে? বলেছিলাম নিজে ভাল লাভ করার পর শেয়ার বিক্রী করুন, আর নিজেকে সান্তনা দেন এই ভাবে যে বাকী লাভ অন্য ভাই করুক। এই ব্যবসা করে কেউ গাড়ী বাড়ী করছে, আবার কেউ পথে বসে গেছে, এমনকি আত্মহত্যার মতো পথও বেছে নিয়েছে, অনেকেই আমাকে লিখেছেন, বস আমি শেষ হয়ে গেলাম, তাদের অবস্থা ঐ বুনো সিংহের সাথে ছবি তোলার মতো নয় কি?
সবার কাছে সব শেয়ার ভাল লাগে না, আবার সবার কপালে সব শেয়ার সয় না, আবার কোন কোন শেয়ারের প্রতি প্রবল আগ্রহ তৈরী হয়, পতঙ্গের মতো কেনার জন্য ঝূঁকে পড়ে ঝুঁকির পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে ফেলি। খুব সহজ কিছু হিসেব কষলেই সেই ঝুঁকির পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনা বা লাভ করা যায়। সব চেয়ে বেশী লস হয় মন গড়া শেয়ার কিনে। এই কাজ কখনও করবেন না। যখন পুরো মার্কেট আপট্রেন্ডে থাকে তখন হয়তো লাভ হয় কিন্তু অন্য সময়ে লস হয় বেশী। চার্ট বা টেকনিক্যাল এ্যানালাইসিস আপনাকে মন গড়া শেয়ার কেনা যাবে কি না সে বিষয়ে সাহায্য করবে, কারণ বাজারের ভলিয়ম বা দরের রিডিং ঐ সব চার্টেই লুকিয়ে থাকে।
কে কোন শেয়ার কিনবেন?
আমি আপনাদের বলেছিলাম আপট্রেন্ডে কোনো শেয়ারে বটমে ডোজী তৈরীর পর বড় ভলিয়মে দর বৃদ্ধি সে শেয়ার অনেক বাড়ার ইঙ্গিত দেয় কিন্তু কোন কারণে যদি সেই মুহূর্তে সেটা বাড়তে না পারে তবে পরবর্তীতে সেই শেয়ার দর আরও বাড়ার সুযোগ থাকে, সহজ কথায় বলতে পারি যে শেয়ারগুলোয় বড় বড় পার্টি আটকে গেছে অর্থাৎ বড় ভলিয়মে দর বৃদ্ধি পাওয়ার পরও দর অনেক কমে গেছে এমন শেয়ারের লিস্ট তৈরী করুন। সেই লিস্ট আমার কাছে পাঠান। তখন আমি বলে দিতে পারবো, কোনটা কিনবেন বা বেচবেন। দেখি কে কে সরবরাহ করতে পারে? হোক সে শেয়ার ভাল অথবা খারাপ? কোনো শেয়ার কেনার আগ্রহ তৈরী হলে সেই শেয়ার কেনার জন্য কমপক্ষে ১০ দিন পর্যবেক্ষণ করুন, এবং তার ধরণ পরীক্ষা করে তার পর কিনুন। ধন্যবাদ সবাইকে আমার সাথে থাকার জন্য।
0 coment rios: